শেখার কোনো বয়স নেই, সেটিই প্রমাণ করলেন ঝিনাইদহের ৫১ বছর বয়সী হাসিনা খাতুন। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে এই বয়সেও নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার বিশ্বাস, যার ভেতরে শিক্ষার আলো নেই, সে অন্ধকারে আছে। তাই এই বয়সে শিক্ষাগ্রহণ করছেন। বর্তমানে তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিক্ষার প্রতি তার এই আগ্রহ অন্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়া হয়নি হাসিনা খাতুনের। অভাবের সংসারে অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। সংসারের বেড়াজালে আটকে যায় জীবন। সেই থেকে সংসার ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে কাটছিল ব্যস্ত জীবন। সংসারে স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। নিজে লেখাপড়া না জানলেও ছেলেকে করিয়েছেন অনার্স পাস।হাসিনা খাতুন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল কাশেমের স্ত্রী। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করবেন। কিন্তু সময়-সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সবশেষ পাঁচ বছর আগে প্রতিবেশী এক নারীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ভর্তি হন ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখন ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তিনি। এই বয়সে চাকরি কিংবা অন্য কোনো কারণে লেখাপড়া করছেন, বিষয়টি এমন নয়। মূলত শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতেই তার এই চেষ্টা।ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে হাসিনা খাতুনের রোল ২৭। বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতিদিন স্কুলে যান। লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী। সহপাঠীরাও তাকে নিয়ে বেশ খুশি।তিনি জানান, সহপাঠীরা তাকে কেউ দাদি আবার কেউ চাচি বলে ডাকে। অবসর সময়ে সহপাঠীদের বিভিন্ন গল্প শোনান। তাদের সঙ্গে ভালো সময় কাটে। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে স্কুলে যান। আবার স্কুল ছুটি হলে একসঙ্গে বাড়ি ফেরেন।পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলে, “প্রথম শ্রেণি থেকেই আমাদের সঙ্গে হাসিনা দাদি পড়ছেন।”বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সীমা রানি ভট্টাচার্য বলেন, “লেখাপড়ার প্রতি হাসিনা খাতুনের খুব আগ্রহ। নিয়মিত স্কুলে আসেন। লিখতে ও পড়ার জন্য মূলত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এখন তিনি সবই পারেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে সহযোগিতা করেন।”ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমেনা বেগম বলেন, “এই বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ছাত্রী হওয়া সত্যিই বিরল। হাসিনা খাতুনের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বেশ। তার আগ্রহের ফলে ভর্তি নিয়েছি। সংসার সামলে নিয়মিত স্কুলে আসেন। শিক্ষকরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। যারা লিখতে ও পড়তে পারেন না, তারা হাসিনা খাতুনের মতো স্কুলে আসলে নিরক্ষরমুক্ত হবে দেশ।”
ঢাকা
,
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::










৫১ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছেন
-
জনস্বার্থে নিউজ ২৪ ডেস্ক :
- আপডেট সময় ১১:১৬:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩
- ৬৬৬ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ