আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনেই আছে ১৮ বছরের কম বয়সীদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর জন্য। এক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের অর্থাৎ ১৮ বছরের কম বয়সীদের কারাগারে আটক রাখা হলে— সেটাতে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে। তাদের জন্য আলাদাভাবে সংশোধনাগার নির্মাণ করা যেতে পারে।’ তবে কারা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।কারা অধিদফতরের সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত আদালত থেকেই বলে দেওয়া হয়— কম বয়সী কিশোর-কিশোরীদের বাইরে কিশোর সংশোধনাগারে রাখার জন্য। আদালত থেকে সুনির্দিষ্ট করে আদেশ না দিলে তাদের কারাগারেই রাখা হয় আলাদাভাবে।’ জায়গার সংকুলান না হওয়ার কারণেই তাদের কারাগারে রাখা হয় বলে জানান কারাগারের সাবেক এই কর্মকর্তা।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা কিশোর অপরাধী, তাদের রাখার জন্য কারাগারগুলোতে তো আলাদাভাবে ব্যবস্থা করা আছে। আর এখন কারাগার তো একটা কারেকশান সেন্টার বা সংশোধনাগার। তাই সেখানে বয়স নির্বিশেষেই হওয়া উচিত। কিশোর-কিশোরীদের জন্য সেটা আরও বেশি প্রযোজ্য। সেখানে তাদেরকে সংশোধনের জন্য কার্যক্রম চালাতে হবে। সে কারণেই কারাগারের ভেতরে আলাদাভাবে ব্যারাক বা সেল তৈরি করা হচ্ছে।’কারাগার কি আসলেই সংশোধনার হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আসলেই এখনও পুরোপুরি কারেকশান সেন্টার হয়েছে বলে আমি মনে করি না। এজন্য আমরা কিছু বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিতে যাচ্ছি। সারা দেশের কারাগারগুলোতে এ বিষয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে আমাদের। কিশোর-কিশোরী ছাড়াও যারা বয়োবৃদ্ধ তাদের বিষয়গুলো তো বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখেই। আমরা সংশোধনাগার হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নেবো।’
সাধারণ বন্দিদের মতো কারাগারগুলোতে রাখা হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের। ১৮ বছরের কম বয়সের বন্দিদের জন্য কারাগারে আলাদা সেল থাকলেও এটাকে আইনের ব্যত্যয় বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে কারাগার নয়, সংশোধনাগার— এভাবেই এখন কারাগারকে অভিহিত করতে চান সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে সাধারণ বন্দিদের মতোই কারাগারের আলাদা সেলে কিশোর-কিশোরীদেরও রাখা হচ্ছে বলে জানান কারা কর্মকর্তারা।পুরনো কারাগারগুলোতে জায়গার সংকুলনা না হওয়ায় প্রায়ই তাদের রাখা হতো দাগী আসামিদের পাশাপাশি সেলে। যদিও কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, কিশোর-কিশোরীদের আলাদা ব্যবস্থায় রাখা হয় সবসময়। তবে বর্তমানে নতুন করে নির্মিত এবং পুনর্নির্মাণ করা কারাগারগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের জন্য আলাদাভাবে সেল বা ব্যারাক তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলোতে ১৮ বছরের কম বয়সী বন্দিদের রাখা হবে।