এমসি কলেজ প্রতিনিধি:
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দীর্ঘদিনের শিক্ষক এবং সদ্য সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী সম্প্রতি অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) গমন করেছেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করা এই শিক্ষাবিদকে গত সোমবার এক বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মানিত করেছে বিভাগ। কলেজের পাঁচতলা একাডেমিক ভবনের নিচতলায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শাহ মো. জুলফাজল। প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন এমসি কলেজের সুযোগ্য অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ। বিদায়ী শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে অধ্যক্ষ বলেন, এমসি কলেজের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ প্রফেসর হুমায়ুন কবীর। তিনি শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না, বরং ছিলেন শিক্ষার্থীদের পরম বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে তিনি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। প্রফেসর রিয়াজ আরও বলেন, মেধাবী এই শিক্ষক কেবল সহকর্মীদের কাছেই নন, বরং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এবং সর্বোপরি একজন অমায়িক মানুষ। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রফেসর হুমায়ুন কবীরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আকমল হোসেন ও শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক প্রফেসর মো. গিয়াস উদ্দিন। এছাড়াও সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মাহমুদুল হাসান, এমসি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর পান্না বসু, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. হাবিবুর রহমান খোকন, এমসির ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ আমির হামজা মোল্লা, সহকারী অধ্যাপক ইমতিয়াজ তানভীর এবং সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আব্দুল বাসিত অনুষ্ঠানে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। বক্তারা প্রফেসর হুমায়ুন কবীর চৌধুরীর দীর্ঘ কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং কলেজের প্রতি তাঁর অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করেন। তাঁরা তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিকতা এবং একজন সহকর্মী হিসেবে তাঁর অমায়িক ব্যবহারের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ আল আজাদ ও খাদিজা আক্তার শশী। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাস্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থী রাজিব হোসাইন এবং পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ মওদুদূর রহমান।
বিদায়ী শিক্ষকের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিভাগের অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীও। মোজাম্মেল হোসেন রুবেল, সালেহ আহমদ, নজরুল ইসলাম, মো. আব্দুল্লাহ, আব্দুল আওয়াল, বুলবুল আহমদ, সুহেল আহমদ, আবুল হোসাইন, শামসুল ইসলাম সাদিক, মাহমুদুল হাসান, সুহাইল আহমদ চৌধুরী, তানজীল চৌধুরী, মারজান উদ্দিন, কাদের বিল্লাহ ও আব্দুর রহমানের মতো প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানো স্মৃতিচারণ করেন এবং তাঁর দিকনির্দেশনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সেলিম আহমদ সাগর ও শিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান সৌরভ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে হোসাইন, আবু নাসের, তৈয়বুর রহমান আবির, আমজাদ হোসাইন, জামিউর রহমান ও মেহেদি হাসান বিদায়ী শিক্ষকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন।
প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী চতুর্দশ বিসিএসের একজন শিক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘকাল এমসি কলেজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর অবসর গ্রহণ এমসি কলেজের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবে, তাঁর আদর্শ এবং কর্ম শিক্ষার্থীদের মাঝে চিরকাল অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাবে। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের চোখেমুখে প্রিয় শিক্ষককে হারানোর বেদনা এবং একইসাথে তাঁর দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন কামনার আন্তরিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমসি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রফেসর হুমায়ুন কবীর চৌধুরীর অভাব অনুভব করবে, তবে তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষা ও মূল্যবোধ সর্বদা তাদের পথপ্রদর্শন করবে।