মেহমান বা যে কেউ বাড়িতে গেলে আপ্যায়ন করার ক্ষেত্রে পান-সুপারী যেন বাদ না পড়ে সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখেন বাঙালি শাশুড়ি পুত্রবধুরা। বাঙালি আর পানি সুপারী প্রাচীনকাল থেকেই একাকার। সিলেট অঞ্চলে এই পান সুপারির চাষ তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। সারা দেশে এমনকি বিদেশ পর্যন্ত সিলেটের পান সুপারির সুনাম রয়েছে। কিন্তু এখন আর আগের মত এত ফলন নেই সুপারিতে। গত কয়েক বছর ধরে সিলেটে সুপারির ফলন কমে এসেছে। অতিবৃষ্টি ও খরার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলন কমার ফলে সিলেটের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুপারি। এতে বিপাকে পড়েছেন সিলেটে বেশি সুপারি খাওয়া নারী-পুরুষরা।
সিলেটের জকিগঞ্জ, জৈন্তা, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তের বিভিন্ন পুঞ্জি এলাকায় রয়েছে সুপারির বেশিরভাগ বাগান। এসব উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সুপারি গাছের দেখা মেলে। এ ফসলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখে অনেকে সুপারি গাছের বাগান করেছেন। চারা লাগানোর আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে সুপারির গাছ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে চরা (ফুল) আসে। সুপারি পাকতে শুরু করে কার্তিক মাস নাগাদ। অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ-মাঘ মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয় সুপারি।
তারা জানান, সিলেটে স্থানীয়ভাবে ‘ঘা’ ও ‘ভি’–এর হিসাবে সুপারি ক্রয়–বিক্রয় করা হয়। ১২টি সুপারিতে এক ঘা ও ৪০ ঘা (৪৮০টি) দিয়ে এক ভি হয়। গত বছর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা সুপারির ভি বিক্রি হলেও এ বছর ওই ভি ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার সুপারির হাট বসে সিলেট অঞ্চলের বড় সুপারির হাট নামে খ্যাত কানাইঘাট উপজেলার সুরইঘাট বাজারে।। কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস এ বাজারে সুপারি বেচাকেনা জমে ওঠে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে সুপারি কিনতে আসেন। ওই বাজারে অন্যান্য বছর স্থানীয় সুপারির পাশাপাশি ভারত থেকে আসা সুপারি বিক্রি করা হতো। তবে এ বছর স্থানীয় সুপারির ফলন কম হয়েছে। ভারত থেকেও সুপারি আসা বন্ধ আছে। তাই এ বছর সুপারির দাম অনেক বেড়ে গেছে। সুপারির বাগানমালিকরা জানান- এ বছর সুপারির গাছে ফল আসার সময়ে অধিক বৃষ্টি হয়েছে। আবার পরে অধিক খরা ছিল। তাই বাগানগুলোর অধিকাংশ গাছে সুপারি ধরেনি।
সিলেট জেলায় দুই হাজার ২৩৮ হেক্টর জমিতে সুপারি গাছ আছে। গত মৌসুমে ১৩ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন শুকনা ও ২০ হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন কাঁচা সুপারি সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বছরও সমপরিমাণ জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।