ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোট সরকারের অবসানের দাবিতে রাজধানী তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে আনুমানিক এক লাখ ১০ হাজার মানুষ। বিক্ষোভ-মিছিল ছড়িয়ে পড়ে নগরীর কেন্দ্রস্থলজুড়ে। গত এক দশকের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভগুলোর অন্যতম বিক্ষোভ এটি।
ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে উগ্র-ডানপন্থি এই নেতানিয়াহুর সরকারে আছে অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় কট্টরপন্থিরা। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শাসনকে হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগ করছেন।
এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেন, এই সরকার বিপজ্জনক। এই সরকার নারীদের জন্য, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জন্য এমনকী গরিব মানুষদের জন্যও ভালো হবে না; আর ফিলিস্তিনিদের জন্য তো অবশ্যই নয়।
ইসরায়েলের চারটি ভিন্ন নগরীতে দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো এত বড় গণবিক্ষোভ চলে। নেতানিয়াহুর সরকার আদালত সংস্কারের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার বিরুদ্ধেই ফুঁসে উঠেছে মানুষ।
বিচারবিভাগের ক্ষমতা আমূল কমানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব হবে, দুর্নীতির বিস্তার ঘটবে এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে বলে সমালোচনা করছেন সরকার-বিরোধীরা।
বিচারবিভাগের ক্ষমতা কমানো হলে পার্লামেন্টের সদস্যরা ভবিষ্যতে আদালতকে উপেক্ষা করে এমন সব আইন পাস করতে পারবেন, যা আদালত এর আগে খারিজ করে দিয়েছে।
সরকারের এই পরিকল্পনার বিরোধীরা বলছেন, এর ফলে ইসরায়েলে যে গণতান্ত্রিক ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ বা ক্ষমতার ভারসাম্য আছে, তা হুমকির মুখে পড়বে।
নেতানিয়াহু সরকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগেও রাজনীতিবিদদের ভূমিকা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। যাতে মন্ত্রীরা তাদের নিজস্ব আইনি উপদেষ্টা নিয়োগ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই ঘুষ, জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় বিচারাধীন থাকার সময়েই বিচার বিভাগে এই বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু আদতে নিজে জেলে যাওয়া এড়াতেই বিচারকদের ওপর প্রভাব বিস্তারের এমন চেষ্টা নিয়েছেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আরিয়েহ ডেরিকে বরখাস্ত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। দেশটির আদালতের এক আদেশের পর তিনি এই পদক্ষেপ নেন।
রবিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার এক বৈঠক হয়। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরিয়েহ ডেরিকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা আসে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আরিয়েহ ডেরি আর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কারণ তিনি ট্যাক্স ইস্যুতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, একটি ভারি হৃদয়ের সঙ্গে, অত্যন্ত দুঃখ ও কঠিন অনুভূতি নিয়ে আমি আপনাকে সরকারের একজন মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।