ঢাকা নিউমার্কেট লাগোয়া নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লেগেছে
ভোরে খবর পাওয়ার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করতে দ্রুতই এগিয়ে আসে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।ফায়ার সার্ভিস বলছে ভোর ৫টা ৪০মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর পরই তাদের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।কিন্তু এরপর বিভিন্ন দিকে ধোঁয়া দেখা যেতে থাকে। কোনো কোনো অংশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।বিশেষ করে মার্কেটটির যে অংশে কাপড়ের দোকানগুলো সেখানকার বিভিন্ন দিক থেকে আগুন দেখা যাচ্ছিলো।সকাল আটটা নাগাদ মার্কেটের তৃতীয় তলাতেই আগুন জ্বলতে দেখা যায়।ধোঁয়ার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তখন ফায়ার সার্ভিসের আরও কয়েকটি ইউনিটিকে ঘটনাস্থলে আনা হয়।সকাল দশটায় ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়েছে যে তাদের মোট ত্রিশটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।পার্শ্ববতী ঢাকা কলেজের পুকুর থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে অনবরত পানি দেয়া হচ্ছিলো আগুন ও ধোঁয়া লক্ষ্য করে।কিন্তু এর মধ্যেও ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাড়তে দেখা গেছে।ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় নয় জন ফায়ার ফাইটারসহ অন্তত ১৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে ফায়ার মহাপরিচালক
সোয়া দশটার দিকে ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন।তিনি বলেন নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।তিনি দুর্ঘটনা এড়াতে শুষ্ক মৌসুমে মার্কেটগুলোতে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন।”আমরা প্রতিটি মার্কেটে যাচ্ছি, সতর্ক করছি কিন্তু কেনো যেন আমরা সতর্ক নই,” বলছিলেন তিনি।তিনি গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশকে সাম্প্রতিক আগুনের ঘটনাগুলোর মধ্যে নাশকতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন।”আমরাও মনে করি এটা খতিয়ে দেখা দরকার। একের পর এক কেন আগুন লাগছে,” বলছিলেন তিনি।ওদিকে আইএসপিআর জানিয়েছে নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তার জন্য সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনী কাজ করছে।
ব্যবসায়ীদের কান্না
ওদিকে আগুনের খবর পেয়েই নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ছুটে এসে তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিভিন্ন টেলিভিশনে ব্যবসায়ীরা কয়েকজন বলছিলেন যে ঈদে উপলক্ষ্যে মার্কেটের দোকানগুলোতে নতুন পণ্য তোলা হয়েছিলো।অনেকে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত দোকানেই ছিলেন। ফলে দিনের লেনদেনের টাকা সরানোর সময় পাননি।প্রচণ্ড ধোঁয়ার মধ্যে তারা যে যেখান দিয়ে সম্ভব প্রবেশ করে নিজ দোকান থেকে মালামাল সরানোর চেষ্টা করছিলেন।আগুন উপরের দিকে থাকায় নীচ তলা ও দ্বিতীয় তলার দোকানিরা তাদের মালামাল কিছুটা সরিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।সোয়া দশটার দিকে তৃতীয় তলার আগুন ছড়িয়ে পড়ে মার্কেটের দোতলাতেও। এর মধ্যেই সেখান থেকে মালামাল সরানোর চেষ্টা করছিলেন অনেক দোকানি।ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অনুযায়ী তিন তলা ওই মার্কেটে প্রায় বারশ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দোকানে একাধিক অংশ আছে।একজন ব্যবসায়ী হাতের চাবি দেখিয়ে একটি টেলিভিশনকে চ্যানেল কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “এটাই এখন শেষ সম্বল ভাই। আর কিছু নাই”।ঢাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় নিউ মার্কেট পঞ্চাশের দশকে নির্মিত হয়েছিলো। এর একদিকে মিরপুর রোড, উত্তরে ঢাকা কলেজ এবং অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।এটি ঘেষেই তৈরি হয়েছে নিউ সুপার মার্কেট, যেখানে কাপড়ের দোকানই বেশি।তবে সুপার মার্কেটসহ পুরো নিউমার্কেট এলাকা বলতে এখন বৈচিত্র্যপূর্ণ দোকানের সমাহার কারণ সব ধরণের গৃহস্থালি পণ্যের দোকান আছে এই মার্কেটে।প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই নিউমার্কেট ও সুপার মার্কেটে আসেন দরকারি পণ্য ক্রয় করতে। আর এখন ঈদের মৌসুম বলে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি।কিন্তু আগুন কীভাবে লেগেছে সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানায়নি ফায়ার সার্ভিস। তবে তিন তলায় যেখানে আগুন লেগেছে সেখানেই সংযুক্ত একটি ফুটওভার ব্রিজের কাজ রাতে চলছিলো বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন।প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ঢাকার আরেক সুপরিচিত মার্কেট বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লেগে প্রায় পাঁচ হাজার দোকানের সব পুড়ে গেছে।