প্রায় সকলেই ডিম খেতে পছন্দ করেন। তাই তো সারা দেশে ডিমের এত চাহিদা। এমনকী এই খাবারের মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার কথা মাথায় রেখে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্যও কাজ করে একটি সংস্থা। সেই সংস্থার নির্দেশ মতোই পাইকারি বাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমাদের দেশে ডিমের গুরুত্ব ঠিক কতটা!
বিশেষজ্ঞদের কথায়, কম পয়সায় ডিমের মতো উপকারী আর একটি খাবারও আপনি খুঁজে পাবেন না। তাই ধনী হোক বা দরিদ্র, প্রায় সব মহলেই ডিমের চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে।
তবে বর্তমানে সাদা ডিমের পাশাপাশি বাজার দখল করতে নেমে পড়েছে বাদামি রঙের ডিম। আর এই ফাঁকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীর দাবি, সাদা রঙের ডিমের তুলনায় নাকি বাদামি ডিম খেলে অনেক বেশি উপকার মিলবে। আর এমন ‘বাণী’ শোনার পরই সাধারণ মানুষ পড়ে গিয়েছেন বিরাট বিড়াম্বনায়। তাঁরা বুঝতেই পারছেন না, এই ধরনের দাবির সত্যতা ঠিক কতটা।
তাই জনসাধারণের মনের এইসব প্রশ্ন নিয়েই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তিনিই আমাদের এই বিষয়ে বিশদে জানালেন। (সব ছবি সৌজন্য: পিক্সেলস)
১. বাদামি ডিমের সাতকাহন
এক বিশেষ ধরনের মুরগি ব্রাউন এগ দেয়। এক্ষেত্রে ডিমের খোলসের পিগমেনটশন হয় আলাদা। তাই এর রং হয় বাদামি। এই ধরনের মুরগি পালনের সময় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ফলে মুরগি প্রতিপালনের খরচ কিছুটা বেড়ে যায়। তাই সাধারণ ডিমের তুলনায় ব্রাউন এগ-এর দাম কিছুটা বেশি। এছাড়া এই ডিম নিয়ে আলাদা করে তেমন কিছু বলার নেই।
২. ব্রাউন এগ কি সাদা ডিমের তুলনায় উপকারী?
এই ধারণাকে ভ্রান্ত বলেই উড়িয়ে দিলেন ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, সাদা ডিমের থেকে ব্রাউন এগ সামান্য কিছুটা বড় হয়। এটাই হল মূল তফাত। তার বাইরে এর সঙ্গে সাদা ডিমের কোনও পার্থক্য নেই। এই দুই ধরনের ডিম খেলেই একই রকম পুষ্টি মিলবে। তাই যাঁরা সাদা ডিম খেতে পছন্দ করেন, তাঁরা আশাহত হবেন না। বরং বেশি দাম দিয়ে ব্রাউন এগ কেনারই কোনও অর্থ নেই। তার বদলে কম দামে সাদা ডিম খেয়ে আপনারা সঠিক কাজটাই করছেন।
৩. ডিমের প্রোটিন অতুলনীয়
আমাদের শরীরের একাধিক জরুরি কাজে প্রোটিনের প্রয়োজন। জানলে অবাক হয়ে যাবেন, পেশি, চুল, নখ তৈরি থেকে শুরু করে ইমিউনিটি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জরুরি উৎসেচক তৈরিতে প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই দেহে প্রোটিনের ঘাটতি মিটিয়ে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ডিম। আসলে ২টি বা ১০০ গ্রাম ডিমে রয়েছে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন। আর ডিমের প্রোটিন কিন্তু সবথেকে উৎকৃষ্ট মানের। এর বায়োলজিক্যাল ভ্যালু খুবই বেশি। তাই নিয়মিত ডিম খাওয়া দরকার।
৪. হাড়ের যত্নে ডিম অপরিহার্য
আজকাল ৩০ পেরতে না পেরতেই হাড়ের একাধিক অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে। তাই হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। আর ডিম হল এই দুই উপাদানের খনি। তাই নিয়মিত ডিম খেলে হাড় শক্তপোক্ত থাকবে বৈকি।
এছাড়া ডিমে কিছুটা পরিমাণে হলেও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে। এই উপাদান কিন্তু হার্ট, ব্রেন সহ দেহের একাধিক অঙ্গের খেয়াল রাখার কাজে সিদ্ধহস্ত। এতেই সুস্থ খাকতে প্রতিদিন ডিম খান। তাহলেই ফল পাবেন হাতেনাতে।
৫. দিনে কটা ডিম খাওয়া উচিত?
ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, যে কোনও সুস্থ মানুষ দিনে একটা গোটা ডিম খেতে পারেন। এতে এতেই পুষ্টির ঘাটতি মিটবে। তবে ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, হাই বিপি, হার্টের অসুখের মতো রোগে আক্রান্তরা গোটা ডিম খাবেন না। বরং আপনারা ডিমের সাদা অংশটা খান। এতেই সুস্থ থাকতে পারবেন। তবে মাসে এক-আধবার ডিমের কুসুম খেলে তেমন একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।