ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। Logo শান্তিগঞ্জের জয়সিদ্ধি-বসিউয়াখাউরী গ্রামে বিএনপির কর্মী সভা Logo জগন্নাথপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কমিটি গঠন Logo পরিবেশ নষ্ট করে কোন বাঁধ নির্মাণ হবেনা – পরিবেশ উপদেষ্টা Logo হাওরের জন্য সরকারের মাস্টার প্লান আছে- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান Logo জগন্নাথপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo মাটিয়াইন ও টাঙুয়ার হাওর পরিদর্শন….. আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ শীর্ষক ইউনিয়ন কর্মশালা Logo ২০২৫–২৬ সেশনের জন্য ২নং পাটলী ইউনিয়ন জামায়াতের কমিটি ঘোষণা।

গ্রামের ছেলে রাজীব এখন বিসিএস ক্যাডার

মান্নার মিয়া স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাতের আঁধারে দেখা স্বপ্নগুলো কারো জীবনে স্বপ্নই থেকে যায় আবার কারো জীবনে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ফিরে পায় আলোর প্রহর। রাতের আধারে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ চমকে উঠা স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন মানুষের জীবনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ধাবিত করতে পারে আগামীর দিগন্তে। তেমনি একজন আমার গ্রামের ছেলে রাজীব।

৪৩ তম বিসিএসে “সহকারী কর কমিশনার” ক্যাডারে গেজেটপ্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজীব কান্তি দাশ। কর ক্যাডারে তাহার পজিশন ৪৭তম। ৪৩ তম বিসিএস ছাড়াও তিনি ৪০ ও ৪১তম বিসিএসে অংশ নিয়েছিলেন। ৪০ তম বিসিএসে সাফল্য না পেলেও ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি। এই বিসিএস থেকে তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ছিলেন। বর্তমানে রাজীব পল্লী বিদ্যাুতায়ন বোর্ডে “সহকারী পরিচালক” হিসেবে কর্মরত আছেন।

পারিবারিক পরিচিতিঃ সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের অর্ন্তগত ৭ নং ওয়ার্ডের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ ছোট একটি গ্রাম ফতেপুরে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবক রামা কান্ত দাশ ও মাতা দিপালী রানী দাশের সংসারে কনিষ্ঠ পুত্র রাজীবের শৈশব কাটে প্রামে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজিব সবার ছোট

সবুজ-শ্যামল গ্রামের সুশীতল ছায়ায় সবুজের সমারোহে বেড়ে উঠা রাজীবের শিশুকাল কাটে অভাব অনটনের একটি সংসারে। ছয় সদস্য বিশিষ্ট পরিবারে বাবার একমাত্র উপার্জনে কোন রকমে চলত পারিবারিক ভরন-পোষণ কিন্তু ক্লান্ত হয়নি সন্তানদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করতে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনায় আকৃষ্ট হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অক্ষম রামা কান্ত বাবু হাল ছাড়েননি শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে। তাহার এই হাল ছাড়া সংসারে ক্ষণিক সময়ে উৎসাহ যোগাতেন শিক্ষক অনন্ত কুমার দাশ। বাবার সান্নিধ্যে বেড়ে উঠা তাহার বড় ভাই রানা কান্ত দাস পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে পড়াশোনাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার পিতা রামা কান্ত স্বল্প আয় থেকেই বহন করে নিতেন। বাবার পর অনার্স-মাস্টার্স পড়াকালীন সময়ে পড়াশোনার জন্য সব ধরনের ব্যয়ভার বহন করেছেন বড় ভাই। এমন উদার মন-মানসিকতার জন্য রাজীব বড় ভাইয়ের কাছে ও চিরকৃতজ্ঞ।

শিক্ষাজীবনঃ তিনি ২০০৬ সালে গ্রামের পাঠশালা ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ২০০৭ সালে জয়কলস উজানীগাঁও রশিদীয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। গ্রামের মেঠো পথে দেড় মাইল পায়ে হেঁটে পথচলা রাজীব ২০১২ সালে জয়কলস উজানীগাঁও রশিদীয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে জিপিএ ৪.৮৮ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৪ সালে বিভাগীয় শহর সিলেটের শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজ হতে জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাস কোর্সে ভর্তি হন তিনি। ২০১৮ সালে “পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ” বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্নাস এবং ২০১৯ সালে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকুরির সন্ধান খোঁজেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নগুলো ছিল বিসিএস ক্যাডারের দিকে।

কর্মজীবনঃ আশার বাণী নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সালে তিনি অফিসার (জেনারেল) পদে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে প্রথম চাকুরিতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সাল হতে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে কর্মরত আছেন। এসময় ও তিনি ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে নেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কর কমিশনের “সহকারী কর কমিশনার” পদে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। আগামী ১৭ ই নভেম্বর ২০২৪ ইং “সহকারী কর কমিশনার” হিসেবে যোগদান করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।।

রাজীব কান্তি দাস এর অনুভূতিঃ রাজীব বলেন,আমার মা-বাবা, ভাই-বোনকে নিয়ে একসাথে বেঁচে আছি এই দিনগুলোই তো আমার সবচেয়ে সুখের দিন। তবে আমার জীবনের আনন্দঘন মুহূর্ত সেটাই যখন আমি ৪৩ তম বিসিএস ক্যাডার ভুক্ত হয়েছি। আমার প্রথম স্বপ্ন ছিল আমি একটি সরকারি চাকুরি করব এবং আমার সেই চাকুরিটা হবে বিসিএস ক্যাডার। মহান স্রষ্টা আমার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন।

রাজিবের পিতা রামা কান্ত দাস বলেন, আমার ছেলের এমন ফলাফলে আমি আনন্দিত। আমার সেই কষ্টের দিনগুলো আর মনে থাকবে না। অভাব অনটনের এই সংসারে আমি আমার কষ্টের এবং ধৈর্য্যের ফলাফল পেয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে দয়া করেছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় সংবাদ

জগন্নাথপুরের ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দকে শিবির কর্মী বলে প্রচারণা চালানোয় জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।

গ্রামের ছেলে রাজীব এখন বিসিএস ক্যাডার

আপডেট সময় ১০:৪৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

মান্নার মিয়া স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাতের আঁধারে দেখা স্বপ্নগুলো কারো জীবনে স্বপ্নই থেকে যায় আবার কারো জীবনে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ফিরে পায় আলোর প্রহর। রাতের আধারে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ চমকে উঠা স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন মানুষের জীবনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ধাবিত করতে পারে আগামীর দিগন্তে। তেমনি একজন আমার গ্রামের ছেলে রাজীব।

৪৩ তম বিসিএসে “সহকারী কর কমিশনার” ক্যাডারে গেজেটপ্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজীব কান্তি দাশ। কর ক্যাডারে তাহার পজিশন ৪৭তম। ৪৩ তম বিসিএস ছাড়াও তিনি ৪০ ও ৪১তম বিসিএসে অংশ নিয়েছিলেন। ৪০ তম বিসিএসে সাফল্য না পেলেও ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি। এই বিসিএস থেকে তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ছিলেন। বর্তমানে রাজীব পল্লী বিদ্যাুতায়ন বোর্ডে “সহকারী পরিচালক” হিসেবে কর্মরত আছেন।

পারিবারিক পরিচিতিঃ সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের অর্ন্তগত ৭ নং ওয়ার্ডের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ ছোট একটি গ্রাম ফতেপুরে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবক রামা কান্ত দাশ ও মাতা দিপালী রানী দাশের সংসারে কনিষ্ঠ পুত্র রাজীবের শৈশব কাটে প্রামে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজিব সবার ছোট

সবুজ-শ্যামল গ্রামের সুশীতল ছায়ায় সবুজের সমারোহে বেড়ে উঠা রাজীবের শিশুকাল কাটে অভাব অনটনের একটি সংসারে। ছয় সদস্য বিশিষ্ট পরিবারে বাবার একমাত্র উপার্জনে কোন রকমে চলত পারিবারিক ভরন-পোষণ কিন্তু ক্লান্ত হয়নি সন্তানদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করতে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনায় আকৃষ্ট হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অক্ষম রামা কান্ত বাবু হাল ছাড়েননি শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে। তাহার এই হাল ছাড়া সংসারে ক্ষণিক সময়ে উৎসাহ যোগাতেন শিক্ষক অনন্ত কুমার দাশ। বাবার সান্নিধ্যে বেড়ে উঠা তাহার বড় ভাই রানা কান্ত দাস পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে পড়াশোনাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার পিতা রামা কান্ত স্বল্প আয় থেকেই বহন করে নিতেন। বাবার পর অনার্স-মাস্টার্স পড়াকালীন সময়ে পড়াশোনার জন্য সব ধরনের ব্যয়ভার বহন করেছেন বড় ভাই। এমন উদার মন-মানসিকতার জন্য রাজীব বড় ভাইয়ের কাছে ও চিরকৃতজ্ঞ।

শিক্ষাজীবনঃ তিনি ২০০৬ সালে গ্রামের পাঠশালা ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ২০০৭ সালে জয়কলস উজানীগাঁও রশিদীয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। গ্রামের মেঠো পথে দেড় মাইল পায়ে হেঁটে পথচলা রাজীব ২০১২ সালে জয়কলস উজানীগাঁও রশিদীয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে জিপিএ ৪.৮৮ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৪ সালে বিভাগীয় শহর সিলেটের শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজ হতে জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাস কোর্সে ভর্তি হন তিনি। ২০১৮ সালে “পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ” বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্নাস এবং ২০১৯ সালে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকুরির সন্ধান খোঁজেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নগুলো ছিল বিসিএস ক্যাডারের দিকে।

কর্মজীবনঃ আশার বাণী নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সালে তিনি অফিসার (জেনারেল) পদে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে প্রথম চাকুরিতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সাল হতে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে কর্মরত আছেন। এসময় ও তিনি ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে নেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কর কমিশনের “সহকারী কর কমিশনার” পদে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। আগামী ১৭ ই নভেম্বর ২০২৪ ইং “সহকারী কর কমিশনার” হিসেবে যোগদান করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।।

রাজীব কান্তি দাস এর অনুভূতিঃ রাজীব বলেন,আমার মা-বাবা, ভাই-বোনকে নিয়ে একসাথে বেঁচে আছি এই দিনগুলোই তো আমার সবচেয়ে সুখের দিন। তবে আমার জীবনের আনন্দঘন মুহূর্ত সেটাই যখন আমি ৪৩ তম বিসিএস ক্যাডার ভুক্ত হয়েছি। আমার প্রথম স্বপ্ন ছিল আমি একটি সরকারি চাকুরি করব এবং আমার সেই চাকুরিটা হবে বিসিএস ক্যাডার। মহান স্রষ্টা আমার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন।

রাজিবের পিতা রামা কান্ত দাস বলেন, আমার ছেলের এমন ফলাফলে আমি আনন্দিত। আমার সেই কষ্টের দিনগুলো আর মনে থাকবে না। অভাব অনটনের এই সংসারে আমি আমার কষ্টের এবং ধৈর্য্যের ফলাফল পেয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে দয়া করেছেন।