ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনের আধিপত্য কমে যাওয়ায় এসব দেশের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাজারের বিদ্যমান সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ইইউর বাজারে বছরে আরও ১,৮০০ কোটি ডলার রপ্তানি করা যাবে।তবে ইইউতে রপ্তানি মুনাফা ও এফডিআই বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অবৈধ বিনিয়োগ বেড়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বন্ধে পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদরা।ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত “ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পঞ্চাশ বছর: সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া” শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।সেমিনারটি রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এবং ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাং (এফইএস) বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজন করে।এতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে বর্তমানে বাংলাদেশ তাদের সক্ষমতার মাত্র ৬০% ব্যবহার করছে। বাকি সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ইইউর বাজারে বছরে আরও ১,৮০০ কোটি ডলার রপ্তানি করা যাবে।সেমিনারে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষত ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে জিএসপি–সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের এখনই উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনার ৬২% জার্মানিতে, ৫৯.৪% ফ্রান্সে, ৬২% স্পেনে, ৫৪.৯% পোল্যান্ডে, ৫২% ইতালিতে এবং ৪৫.৬% নেদারল্যান্ডসে কাজে লাগাচ্ছে।শুধুমাত্র পোশাকের জন্য অব্যবহৃত রপ্তানি সম্ভাবনা ১,৬০০ কোটি ডলার।সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব। বাংলাদেশে ইইউ বিনিয়োগ এখন ২ বিলিয়ন থেকে ৬ বিলিয়ন হয়েছে, আশা করি আরও বাড়বে।”প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, “অর্থ নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগের সুযোগের অভাবে অর্থ পাচার হয়।”তিনিও অবৈধ টাকা দেশে ঢুকতে দেওয়ার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্থ পাচারকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করেন।তিনি বলেন, “এই টাকা বাংলাদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না, এটি ইইউতে পুনরায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে।”প্রতিবেদনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।তিনি বলেন, “গত পাঁচ দশকে, ইইউ একটি অপরিহার্য বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার, কারণ বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক পণ্য রপ্তানি ইইউ-এর জন্য নির্ধারিত। এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) উদ্যোগের সুবিধা নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উদ্ভূত পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক শুল্কমুক্ত এবং কোটা-মুক্ত বাজার সুযোগ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ইইউতে বাংলাদেশের সম্মিলিত রপ্তানি মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। ২০০০-০১ থেকে ২০২১-২ সালে ২৩.২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।তাদের মতে, মূল্যের দিক থেকে, বাংলাদেশের পুরো রপ্তানির ৮০% এরও বেশি ইউরোপের বাজারে শুল্ক অগ্রাধিকার পায়। এতে বাংলাদেশ ইইউ এলডিসি-নির্দিষ্ট বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় ও একক বৃহত্তম সুবিধাভোগী।অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট (ওডিএ) সম্পর্কে তিনি বলেন, বিজিডি পাওয়া মোট ওডিএর প্রায় ১০% ইইউ ও ইইউ প্রতিষ্ঠান এবং পৃথক ইইউ দেশগুলো গত পাঁচ বছরে ২.৩ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে।২০১৯ সাল থেকে, ইইউ সামাজিক সুরক্ষার জন্য উল্লেখযোগ্য (২৪৭ মিলিয়ন ইউরো) বাজেট সহায়তা ও রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং মহামারী নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার জন্য বর্ধিত সহায়তা দিয়েছে।এর আগে, স্বাগত বক্তব্য রাখেন- এফইএস বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কলবিটজ ও র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ।প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ।আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপারসন লাইলুফার ইয়াসমিন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, আইসিসিএডির উপ-পরিচালক মিজান আর খান।
ঢাকা
,
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::










ইইউতে রপ্তানির বড় সুযোগ
-
জনস্বার্থে নিউজ ২৪ ডেস্ক :
- আপডেট সময় ০৬:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩
- ৬০৪ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ