ঢাকা , বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
Logo শাল্লায় একাডেমিক ভবন প্রধান শিক্ষক ও তার ভাইয়ের দখলে Logo দিরাই বালিকা বিদ্যালয়ের মিলাদ মাহফিল Logo দিরাইয়ে অহিংস দিবস পালিত Logo আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উপলক্ষে শান্তিগঞ্জে পিএফজি’র মানববন্ধন  Logo শান্তিগঞ্জে কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন Logo শান্তিগঞ্জে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়  Logo সুনামগঞ্জের জিল্লুর রহমান সহ ছয় অতিরিক্ত সচিবকে ওএসডি Logo দিরাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে কোন অনিয়ম দালালির সাথে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে Logo ল্যাব সংস্কারের টাকা আত্মসা শাল্লায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তুলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোব! Logo শান্তিগঞ্জে জামায়াতের উদ্যোগে সিরাত মাহফিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

নানামুখী সংকটে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

কিশোরগঞ্জের নুরুল হক পেশায় জেলে। মাছ ধরার সময় বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে ধাতব বস্তু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেখানে পচন ধরে। চিকিৎসকের পরামর্শে কেটে ফেলতে হয় ওই আঙুল। তাতেও হয়নি সমাধান। পচন ছড়াতে থাকে পুরো পায়ে। ঢাকার পরিচিত এক চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে হাঁটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু এক আত্মীয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন নুরুল। তিন মাস চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ। কাটতে হয়নি হাঁটু বরং পচন ধরা অংশও এখন উন্নতির দিকে।বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আরেক রোগী আবদুল মান্নান। শরীর জ্বালাপোড়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু সমাধান মেলেনি। এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও আগের চেয়ে ভালো বোধ করছেন।নুরুল হক ও আবদুল মান্নানের মতো অনেক রোগীর দেখা মেলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। নানা স্থানে চিকিৎসা নিয়েও ফল না পেয়ে এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। এতে দিন দিন এখানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানায় জাতীয় হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।তবে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি লোকবল ও সুযোগ-সুবিধা। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি চান হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সুস্থ বাংলাদেশে গড়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

প্রতিদিন বাড়ছে রোগী
প্রতিদিনই হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, একসময় সর্বোচ্চ ১৫০ জন রোগী এলেও এখন দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসেন সেবা নিতে। সে অনুযায়ী লোকবল সংকট থাকায় দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ কেন, জানতে চাইলে সেবা নিতে আসা রোগী স্কুলশিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, এলোপ্যাথি চিকিৎসার সর্বশেষ ধাপ অপারেশন, যা খুব ব্যয়বহুল। তা ছাড়া এলোপ্যাথি যেহেতু দ্রুত কাজ করে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশি। এক রোগ সারতে গিয়ে আরও রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি ধীরে ধীরে কাজ করলেও কারও কোনও ধরনের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া হতে দেখিনি। আর ব্যয় কম বললেই চলে।

দুই বছর ধরে শূন্য হাসপাতাল পরিচালকের পদ
প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৩ সালে কেবল একবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এরপর আর কোনও নতুন নিয়োগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের  চিকিৎসক ও শিক্ষকরা। ফলে চিকিৎসক থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ নানা লোকবল সংকটে আছে প্রতিষ্ঠানটি।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই বছর ধরে খালি পড়ে আছে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালের পরিচালক পদ। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার পদের চারটি পদের মধ্যে একটি খালি, বাকি তিনটি পদে এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছেন, যারা কেবল রোগ নির্ণয় করেন, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বা মেডিসিনের পরামর্শ দেন না তারা। বহির্বিভাগে চারটি পদের মধ্যে একটা খালি, আর একটিতে এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছেন। হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ কম্পাউন্ডার যারা চিকিৎসক দ্বারা নিণয়কৃত রোগ অনুযায়ী ওষুধ তৈরি করে দেন রোগীদের। সেই পদের ছয় জনের জায়গায় তিন জন রয়েছেন, বাকি তিনটি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি। ফলে রোগীদের ওষুধ নিতে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়।এ ছাড়া হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে একজন বিশেষজ্ঞ দ্বারা। ফলে নতুন ওষুধ তৈরির সক্ষমতা থাকলেও বাহির থেকে অনেক ওষুধ কিনে আনতে হয়।

পরিচালনা পদে এমবিবিএস, আপত্তি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের
হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থায় অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার, অল্টারনেটিভ মেডিসিন ও হোমিও অ্যান্ড ট্রেডিশনাল মেডিসিন—এই তিন পরিচালনা পদের ডিরেক্টর, ডিরেক্টর লাইন ও এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর সবাই এমবিবিএস ডিগ্রিধারী। এতে আপত্তি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের।তাদের মতে, এসব পরিচালনা পদে হোমিওপ্যাথি থেকে কোনও প্রতিনিধি না থাকায় দেশে হোমিও চিকিৎসার প্রসার হচ্ছে না, নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নতুন পাস করে বের হওয়া হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা।নাম প্রকাশ না করে একাধিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, এমবিবিএস ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক বিভাগ পরিচালনা করছেন, যার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এখানে যদি হোমিওপ্যাথিক কোনও পরিচালক থাকেন, তারা এই বিভাগের বিস্তারিত বুঝতে পারতেন।চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে অপেক্ষমাণ রোগী

এখনও সব উপজেলায় হয়নি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগ
এখনও দেশের সব উপজেলা হাসপাতলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগ পাননি। এ পর্যন্ত প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা ও মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি পদে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।তারা বলেন, প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম থাকাকালীন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের জন্য ১৫৪টি নতুন পদ সৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত ওই পদগুলোয় কোনও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে নতুন যারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে পাস করে বের হচ্ছেন, তারা পেশাগত অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

রেশনের দাবি হোমিওপ্যাথি শিক্ষার্থীদের
থাকার ব্যবস্থা থাকলেও খাবারের ব্যবস্থা নিজেদের করতে হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী আবু সায়িদ বলেন, আমাদের চাল-ডালের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক হেল্প হতো। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় বাহির থেকে কিনে খাওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্যকর।থরে থরে সাজানো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বিভিন্ন ওষুধের শিশি

অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা
হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সব সংকটের তথ্য সত্য নয় বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের অধক্ষ্য ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, কিছু সংকট রয়েছে কিন্তু তাতে রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে কোনও ব্যাঘাত হচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নতুন। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১৬১ লোকবল দিয়ে চালু হয়; এখন ২০১ জনের মতো আছে।লোকবল কম, এটাও সত্য নয় জানিয়ে ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, মেডিক্যাল অফিসারের একটা-দুইটা পদ শূন্য। তবে এই পদগুলোয়ও চিকিৎসক ছিলেন। তাদের কেউ অন্য কোথাও ট্রান্সফার হয়ে গেছেন, কেউ অবসরে গিয়েছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, তা প্রক্রিয়াধীন আছে। আর কর্মচারীদের যে সংকট তা সমাধানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২৯ জন স্টাফ সরকার দিয়েছে, তারা কাজ করছেন। সুতরাং অফিসার পর্যায়ে যারা আসবেন, তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে আসবেন। আর কর্মচারীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কর্মী নেওয়া হবে।সরকারের পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে তিন ধাপে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মকর্তা, কম্পাউন্ডার, হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিসার্সচারসহ নানা পদে ১৫০ জন নিয়োগ হয়েছে বলে জানান ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, পাইলট প্রকল্পের ২৫ জন এখানে কর্মরত আছেন। এই প্রকল্প থেকেই তারা পরবর্তী সময়ে রেভিনিউতে যাবেন।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এমবিবিএস
এ বিষয়ে ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, এখানে কিছু বিভাগ আছে, যেখানে বিশে ভাবে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক প্রয়োজন। যেমন প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, এনাটোমি, ফিজিওলজি—এসব পদে এমবিবিএস থাকেন। আবার কিছু বিভাগে দুই দল থেকেই যায়। যেমন ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার, সার্জারি, কমিউনিটি মেডিসিন—এসব বিভাগে উভয় থেকে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার কিছু খাত আছে যেখানে কেবল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক থাকেন। সব মিলিয়েই চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হয়।পরিচালনা পদ দুই বছর ফাঁকা নয় জানিয়ে ডা. অসীম বলেন, আমি একাই মেডিক্যালের অধ্যক্ষ হিসেবে আছি, আবার হাসপাতালের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। এ ছাড়া হোমিও ও আয়ুর্বেদিক পরিচালনা পদে সব সময় শুধু এমবিবিএস চিকিৎসকই থাকেন, তা নয়।উদাহরণ টেনে ডা. অসীম কৃষ্ণ বলেন, আমি হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক এখানে অধ্যক্ষ হয়েছি। এর আগে ছিলেন এলোপ্যাথি থেকে একজন। যোগ্যতা অনুযায়ী অবশ্যই সবাই স্থান পান। আর আমাদের সেক্টর থেকে আশা করা যায় একসময় সবাই নিজ যোগ্যতাবলে সব পদে জায়গা করে নেবেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Janasarthe 24

আপনাদের আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহুর্তের খবর দিয়ে আমাদের সহযোগীতা করুন। আমরা আমাদের অনলাইনে তা প্রকাশ করে কৃতজ্ঞ হবো। আমাদের প্রতি মুহুর্তের খবর জানতে আমাদের সাথে থাকুন

শাল্লায় একাডেমিক ভবন প্রধান শিক্ষক ও তার ভাইয়ের দখলে

নানামুখী সংকটে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

আপডেট সময় ১০:৩৬:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

কিশোরগঞ্জের নুরুল হক পেশায় জেলে। মাছ ধরার সময় বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে ধাতব বস্তু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেখানে পচন ধরে। চিকিৎসকের পরামর্শে কেটে ফেলতে হয় ওই আঙুল। তাতেও হয়নি সমাধান। পচন ছড়াতে থাকে পুরো পায়ে। ঢাকার পরিচিত এক চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে হাঁটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু এক আত্মীয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন নুরুল। তিন মাস চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ। কাটতে হয়নি হাঁটু বরং পচন ধরা অংশও এখন উন্নতির দিকে।বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আরেক রোগী আবদুল মান্নান। শরীর জ্বালাপোড়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু সমাধান মেলেনি। এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও আগের চেয়ে ভালো বোধ করছেন।নুরুল হক ও আবদুল মান্নানের মতো অনেক রোগীর দেখা মেলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। নানা স্থানে চিকিৎসা নিয়েও ফল না পেয়ে এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। এতে দিন দিন এখানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানায় জাতীয় হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।তবে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি লোকবল ও সুযোগ-সুবিধা। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি চান হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সুস্থ বাংলাদেশে গড়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

প্রতিদিন বাড়ছে রোগী
প্রতিদিনই হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, একসময় সর্বোচ্চ ১৫০ জন রোগী এলেও এখন দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসেন সেবা নিতে। সে অনুযায়ী লোকবল সংকট থাকায় দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ কেন, জানতে চাইলে সেবা নিতে আসা রোগী স্কুলশিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, এলোপ্যাথি চিকিৎসার সর্বশেষ ধাপ অপারেশন, যা খুব ব্যয়বহুল। তা ছাড়া এলোপ্যাথি যেহেতু দ্রুত কাজ করে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশি। এক রোগ সারতে গিয়ে আরও রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি ধীরে ধীরে কাজ করলেও কারও কোনও ধরনের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া হতে দেখিনি। আর ব্যয় কম বললেই চলে।

দুই বছর ধরে শূন্য হাসপাতাল পরিচালকের পদ
প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৩ সালে কেবল একবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এরপর আর কোনও নতুন নিয়োগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের  চিকিৎসক ও শিক্ষকরা। ফলে চিকিৎসক থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ নানা লোকবল সংকটে আছে প্রতিষ্ঠানটি।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই বছর ধরে খালি পড়ে আছে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালের পরিচালক পদ। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার পদের চারটি পদের মধ্যে একটি খালি, বাকি তিনটি পদে এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছেন, যারা কেবল রোগ নির্ণয় করেন, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বা মেডিসিনের পরামর্শ দেন না তারা। বহির্বিভাগে চারটি পদের মধ্যে একটা খালি, আর একটিতে এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছেন। হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ কম্পাউন্ডার যারা চিকিৎসক দ্বারা নিণয়কৃত রোগ অনুযায়ী ওষুধ তৈরি করে দেন রোগীদের। সেই পদের ছয় জনের জায়গায় তিন জন রয়েছেন, বাকি তিনটি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি। ফলে রোগীদের ওষুধ নিতে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়।এ ছাড়া হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে একজন বিশেষজ্ঞ দ্বারা। ফলে নতুন ওষুধ তৈরির সক্ষমতা থাকলেও বাহির থেকে অনেক ওষুধ কিনে আনতে হয়।

পরিচালনা পদে এমবিবিএস, আপত্তি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের
হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থায় অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার, অল্টারনেটিভ মেডিসিন ও হোমিও অ্যান্ড ট্রেডিশনাল মেডিসিন—এই তিন পরিচালনা পদের ডিরেক্টর, ডিরেক্টর লাইন ও এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর সবাই এমবিবিএস ডিগ্রিধারী। এতে আপত্তি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের।তাদের মতে, এসব পরিচালনা পদে হোমিওপ্যাথি থেকে কোনও প্রতিনিধি না থাকায় দেশে হোমিও চিকিৎসার প্রসার হচ্ছে না, নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নতুন পাস করে বের হওয়া হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা।নাম প্রকাশ না করে একাধিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, এমবিবিএস ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক বিভাগ পরিচালনা করছেন, যার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এখানে যদি হোমিওপ্যাথিক কোনও পরিচালক থাকেন, তারা এই বিভাগের বিস্তারিত বুঝতে পারতেন।চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে অপেক্ষমাণ রোগী

এখনও সব উপজেলায় হয়নি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগ
এখনও দেশের সব উপজেলা হাসপাতলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগ পাননি। এ পর্যন্ত প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা ও মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি পদে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।তারা বলেন, প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম থাকাকালীন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের জন্য ১৫৪টি নতুন পদ সৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত ওই পদগুলোয় কোনও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে নতুন যারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে পাস করে বের হচ্ছেন, তারা পেশাগত অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

রেশনের দাবি হোমিওপ্যাথি শিক্ষার্থীদের
থাকার ব্যবস্থা থাকলেও খাবারের ব্যবস্থা নিজেদের করতে হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী আবু সায়িদ বলেন, আমাদের চাল-ডালের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক হেল্প হতো। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় বাহির থেকে কিনে খাওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্যকর।থরে থরে সাজানো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার বিভিন্ন ওষুধের শিশি

অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা
হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সব সংকটের তথ্য সত্য নয় বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের অধক্ষ্য ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, কিছু সংকট রয়েছে কিন্তু তাতে রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে কোনও ব্যাঘাত হচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নতুন। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১৬১ লোকবল দিয়ে চালু হয়; এখন ২০১ জনের মতো আছে।লোকবল কম, এটাও সত্য নয় জানিয়ে ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, মেডিক্যাল অফিসারের একটা-দুইটা পদ শূন্য। তবে এই পদগুলোয়ও চিকিৎসক ছিলেন। তাদের কেউ অন্য কোথাও ট্রান্সফার হয়ে গেছেন, কেউ অবসরে গিয়েছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, তা প্রক্রিয়াধীন আছে। আর কর্মচারীদের যে সংকট তা সমাধানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২৯ জন স্টাফ সরকার দিয়েছে, তারা কাজ করছেন। সুতরাং অফিসার পর্যায়ে যারা আসবেন, তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে আসবেন। আর কর্মচারীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কর্মী নেওয়া হবে।সরকারের পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে তিন ধাপে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মকর্তা, কম্পাউন্ডার, হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিসার্সচারসহ নানা পদে ১৫০ জন নিয়োগ হয়েছে বলে জানান ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, পাইলট প্রকল্পের ২৫ জন এখানে কর্মরত আছেন। এই প্রকল্প থেকেই তারা পরবর্তী সময়ে রেভিনিউতে যাবেন।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এমবিবিএস
এ বিষয়ে ডা. অসীম কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, এখানে কিছু বিভাগ আছে, যেখানে বিশে ভাবে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক প্রয়োজন। যেমন প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, এনাটোমি, ফিজিওলজি—এসব পদে এমবিবিএস থাকেন। আবার কিছু বিভাগে দুই দল থেকেই যায়। যেমন ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার, সার্জারি, কমিউনিটি মেডিসিন—এসব বিভাগে উভয় থেকে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার কিছু খাত আছে যেখানে কেবল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক থাকেন। সব মিলিয়েই চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হয়।পরিচালনা পদ দুই বছর ফাঁকা নয় জানিয়ে ডা. অসীম বলেন, আমি একাই মেডিক্যালের অধ্যক্ষ হিসেবে আছি, আবার হাসপাতালের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। এ ছাড়া হোমিও ও আয়ুর্বেদিক পরিচালনা পদে সব সময় শুধু এমবিবিএস চিকিৎসকই থাকেন, তা নয়।উদাহরণ টেনে ডা. অসীম কৃষ্ণ বলেন, আমি হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক এখানে অধ্যক্ষ হয়েছি। এর আগে ছিলেন এলোপ্যাথি থেকে একজন। যোগ্যতা অনুযায়ী অবশ্যই সবাই স্থান পান। আর আমাদের সেক্টর থেকে আশা করা যায় একসময় সবাই নিজ যোগ্যতাবলে সব পদে জায়গা করে নেবেন।