পাবেল আহমেদ,শাল্লা::-
সুনামগঞ্জের শাল্লায় শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের দুটি রুম প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলালের দখলে রয়েছে। অনেকেরই মুখে এরকম আলোচনা শুনার পর পরই শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে যান এই প্রতিবেদক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই নবনির্মিত চারতলা ভবনের দুটি রুম দখলে নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলাল। তিনি অতীতের ন্যায় স্থানীয়ভাবে প্রভাব কাটিয়েই এখানে বসবাস করে আসছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
বিভিন্ন ধরনের আসবাব পত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে দুটি রুমে। ওই ভবনে ক্লাস চালু হওয়ার আগেই নীতিমালার বাহিরে গিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি ভবনের বাথরুমও। এদিকে প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলালকে উপস্থিত পাওয়া যায় নি। তবে রুমে থাকা তার ভাই কবির আহমেদের স্ত্রী ও তার ছেলেকে দেখা গেছে। কবির আহমেদের স্ত্রী বলেন আমরা অস্থায়ীভাবে ২-৩ মাসের জন্য এখানে আছি। আমাদের বাসাও তৈরি হচ্ছে, সেটা প্রস্তুত হলে আমরা এখান থেকে চলে যাব। তিনি বলেন আমার স্বীমী বাড়িতে ফিশারির ব্যবসা করে। আমার দুটি মেয়েও এই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। আমার ছেলেরও সামনে পরিক্ষা আছে সেজন্য আমরা এখানে আছি।
ওদিকে রুমে থাকা জিনিসপত্রের ছবি ও ভিডিও করতে অনুমতি চাওয়া হলে অনুমতি পাওয়া যায় নি। কবির আহমেদের স্ত্রী বলেন বড় ভাই (দুলাল মাষ্টার) আসলে পরে আপনারা ভিডিও কইরেন।
প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলালের আপন ছোট ভাই রাসেল মিয়া বলেন এগুলো আমাদেরকে জিঙ্গেস করে কোন লাভ নেই। জিঙ্গেস করতে হলে ইউএনও স্যারকে জিঙ্গেস করেন। ইউএনও স্যার এই স্কুলের সভাপতি আমরা ইউএনও স্যারের অনুমতি নিয়েই এখানে থাকতেছি।
শুধু তাই নয়,তিনি সহ তার আরো এক ভাই কবির আহমেদের পরিবার ও তার আরেক আপন ভাই রাসেল মিয়াও নীতিমালার বাহিরে গিয়ে দুলালের সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। এনিয়ে পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে সমালোচনা ঝড়। স্কুলের ভবনে শুধু প্রধান শিক্ষকই নন তার আরো দুই ভাই ও পরিবার সহ কিভাবে বসবাস করে আসছেন? এনিয়ে শাল্লায় এখন আলোচনার কোন কমতি নেই।
শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সন্তান মন্নান মিয়া বলেন সে আওয়ামীলীগ করে। সে মূলত আওয়ামী লীগ ও ওই স্কুলের তৎকালীন সভাপতি অবনী মোহন দাশের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়েই এসব করে আসছে। এটা নিয়মের বাহিরে উল্লেখ করে তিনি বলেন আগেও সে যে ঘরটায় থাকতো নীতিমালার বাহিরে গিয়ে টাইলস ফিটিংস করে থাকতো। শুধু তাই নয়,তার ক্ষমতার জুড়ে আরো দুই ভাইয়ের পরিবার নিয়ে সে বসবাস করে আসছেন বলে জানান তিনি।
শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান একজন শিক্ষক পরিবার নিয়ে এভাবে ভবনে থাকার কোন নিয়ম নেই। তার ভাইয়েররাও এই স্কুলে কোন চাকরি করে না। নীতিমালার বাহিরে গিয়েই তারা থাকছেন বলে জানান।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন প্রকৌশলী জানান আমরা ভবন দিয়েছি স্কুলের স্বার্থে। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য সরকার ভবন দিয়েছে। এখানে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে থাকার জন্য আমরা ভবন দেইনি। এই বিষয়ে তিনিও ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমি সুপারভাইজার কালিপদ দাস বলেন প্রধান শিক্ষক ভবনে বসবাস করার নীতিমালা আছে কি-না জানি না। তবে তিনি থাকার জন্য ইউএনও স্যারকে আমার সামনেই অবগত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওই স্কুলের সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন বলেন এরকম কোন নীতিমালা নেই। বিষয়টি আমি দেখতেছি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন এটা সে সম্পূর্ণ অন্যায় করতেছে। এটা নিয়ে লেখালেখি করেন,আপনারা লিখিত অভিযোগ করেন। এরকম কোন নীতিমালা নেই। সে যদি থাকতে হয় প্রতিমাসে ভাড়া পরিশোধ করে থাকতে হবে।
এবিষয়ে আরিফ মোহাম্মদ দুলালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি ভাত খাওয়ায় আছি,পরে কথা বলবো। পরে একাধিকবার ফোন করেও আর তাকে পাওয়া যায় নি।