কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষককে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রেখে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।বুধবার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের কয়েকটি দরোজা ভাঙচুর করে।সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে দেবিদ্বার-বিপাড়া (সার্কেল) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিরুল্লা, ওসি কমল কৃষ্ণ ধরসহ এক দল পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোক্তল হোসেন বুধবার দুপুরে স্কুলের বিরতির ফাঁকে এক ছাত্রীকে ডেকে তার অফিস কক্ষে নিয়ে যান। পরে তাকে ভালোমতো লেখাপড়া করা ও কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক না করার জন্য উপদেশ দেন।এসব কথাবার্তার ফাঁকে ওই প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ওই ছাত্রী ধস্তাধস্তি করে দৌড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। এ ঘটনা বাইরে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীও দেখে। পরে তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষ্য দেয়।ওই ছাত্রী বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের ঘটনা জানালে তার বাবা স্কুলে আসেন। ঘটনা জানাজানি হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ স্কুল মাঠে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে জুতার মালা ও প্লাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করে।এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, রাত ৯টার দিক রাবার বুলেট বিদ্ধ হওয়া ৫ ছাত্রকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের জামাতা ঘটনাস্থলে এলে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।শ্লীলতাহানির শিকার ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘দুপুরে আমার মেয়ে বাড়ি গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। তাকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে প্রধান শিক্ষকের যে আচরণের কথা বলেছে তা আমি বাবা হয়ে বলতে পারছি না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক যদি মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে আমরা কোথায় যাব? আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মিথ্যা কলঙ্ক রটিয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’এ বিষয়ে দেবিদ্বার-বিপাড়া (সার্কেল) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিরুল্লা বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তারা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক পুলিশের হেফাজতে আছেন। ভুক্তভোগীর বাবা থানায় মামলা করতে চেয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’